কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ‘কতশত দরকারি বিষয় আছে! ফিকহ, জিহাদ, আকাঈদ, ইসলাহ-তাযকিয়া থেকে শুরু করে হাজারো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ে রয়েছে। ইলমের খিদমত করেন, আল্লাহর রাস্তায় সময় দেন—এসব না করে কেন এই রুকইয়াহ নিয়ে কষ্ট করছেন?’ কেউ আবার বলেন, ‘এসব কাজ ছোটখাটো মোল্লাদের হাতে ছেড়ে দেন, আহলে ইলমরা কেন মূল্যবান সময় ব্যয় করে এসব করবে?’
তাদের জন্য সহজ কথা, আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জাদু, বদনজর, জিন ইত্যাদি সমস্যাগুলো মানুষের মাঝে যতটা ব্যাপক, এর সমাধানের ব্যাপারে মানুষ ততটাই অজ্ঞ। এসকল সমস্যায় মানুষ যে পরিমাণে আক্রান্ত, বিষয়টা তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অবহেলিত।
অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন যাদু বদনজরের রুকইয়াহ সেবা নিতে কল করুনঃ 01708732272
আর শারঈ সমাধানের সাথে তো আমাদের দেশের ৯৯% মানুষই পরিচিত নয়; বরং বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাস হচ্ছে, ‘কুফরি জাদু কাটতে কুফরিই করা লাগবে’ (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্য তারা কবিরাজ-বৈদ্যদের কাছে যায়, আর এভাবে দুনিয়া এবং আখিরাতের শুধু ধ্বংসই অর্জন করে।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ এসব সমস্যায় আক্রান্ত, আমরা কেউ নিজেই ভিকটিম, কারও বা পরিবারস্থ লোক, আর কারও বা আত্মীয়স্বজন। বহু বৈদ্য- কবিরাজের কাছে ঘুরে ঘুরে, বহু পরিশ্রম করে তারা প্রচুর টাকাপয়সা নষ্ট করে ফেলে। এর পেছনে মেধা, শ্রম এবং সময় ব্যয় করে। অবশেষে কেউ-বা সুস্থ জীবনের আশা ছেড়ে দেয়, আর কেউ পরিবার ভেঙে অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়ায়। ওপরন্তু কবিরাজের কাজগুলো কুফরি-শিরকি হওয়ার কারণে নষ্ট হয় নিজের আখিরাতও।
আমার-আপনার চারপাশে এমন মানুষের অভাব নেই। আমাদের দেশে হয়তো এমন একটা প্রাপ্তবয়স্ক লোকও পাওয়া যাবে না, যার নিজের পরিবার অথবা আত্মীয়স্বজনের মাঝে কেউই এজাতীয় সমস্যায় ভুগছে না। এদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই রুকইয়াহ শারইয়াহ একান্ত অপরিহার্য একটি বিষয় ।
তবে আমি বলছি না, আপনি সব ছেড়ে রুকইয়ার জন্য নিবেদিত হয়ে যান; বরং আপনি যা করছেন, সেটাই করতে থাকুন। তবে সম্ভব হলে মাঝেমধ্যে এ বিষয়ে অল্পস্বল্প সময় দিন, কেউ সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাকে এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিন। এতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ—সবারই উপকার।
ওপরন্তু, এর বিনিময়স্বরূপ নিচের ফজিলতগুলোও লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
নিম্নে রুকইয়াহ করার উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো।
১. দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ
একজন রাকী মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার চমৎকার সুযোগ পেয়ে থাকেন— যা রুকইয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর জিন, জাদু ইত্যাদি সমস্যাগুলো নিয়ে যারা আসে, তাদের অনেকেই থাকে এমন, যারা দ্বীন পালনের ব্যাপারে উদাসীন। রুকইয়াহ করার সময় তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়া যায়। আর এদের বিরাট অংশ হয় এমন—যারা সুস্থতা লাভের আশায় কবিরাজ-বৈদ্যদের কাছে ঘুরে ঘুরে ইতিমধ্যে কুফরি বা শিরকি কাজকর্মে লিপ্ত থেকেছে। ফলে এ মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে এসকল কুফরির থাবা থেকে রক্ষা করা এবং তাদের কাছে সহিহ তাওহিদের বার্তা পৌঁছানো যায়।
অবশ্যই রাকীদের এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। কারণ, যুগে যুগে এটা নবিদের সুন্নত। মানুষ তাঁদের কাছে দুনিয়াবি প্রয়োজন নিয়ে আসলেও তাঁরা আখিরাতের দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণকেই প্রাধান্য দিতেন। এ ক্ষেত্রে ইউসুফ-এর ঘটনা লক্ষণীয়। দুজন লোক তাঁর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে এসেছিল, তিনি তাদের সমস্যা এবং সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে অল্প কথায় তাওহিদের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন, এরপর তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খায়বার যুদ্ধের ঘটনা লক্ষ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলি -কে নির্দেশ দিয়েছিলেন— ‘তুমি তোমার পথ ধরে তাদের মাঝে পৌঁছে যাও, এরপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করো, আর তাদেরকে তাদের ওপর আল্লাহর হকগুলোর ব্যাপারে অবগত করো। কারণ, আল্লাহর কসম, তোমার মাধ্যমে যদি একটা মানুষকেও আল্লাহ হিদায়াত দেন, তবে তা তোমার জন্য অসংখ্য লাল উট প্রাপ্তি থেকেও উত্তম হবে।
২. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি
যিনি রুকইয়াহ করেন, প্রতিদিন তাকে দীর্ঘক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করতে হয়। এতে কুরআনের সঙ্গে তার সম্পর্ক দিনদিন বৃদ্ধি পায়।
এর পাশাপাশি কুরআন পাঠের বিবিধ ফজিলত তো রয়েছেই। যেমন : কুরআন তিলাওয়াতের প্রতিটি হরফে সওয়াব! আপনি যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টাও রুকইয়াহ করেন, এই এক ঘণ্টায় আপনার ঝুলিতে অনেকগুলো সওয়াব জমে যাবে।
এ ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন পাঠ করো। কারণ, কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে।
৩. মুসলিম ভাই-বোনদের বিপদে সহায়তা করার সুযোগ
প্রথমে একটি হাদীস খেয়াল করি। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একসময় ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে আমর ইবনু হাজমের বংশের লোকেরা এসে বলল, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের নিকট একটি রুকইয়াহ ছিল—যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়ফুঁক করতাম। এখন আপনি তো ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।’ বর্ণনাকারী বলেন, তারা সেটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থাপন করল। তখন তিনি বললেন, “কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের কোনো উপকার করতে সমর্থ হয়, তাহলে সে যেন তা করে।
এই হাদীসে আমরা দেখলাম, রুকইয়ার মাধ্যমে যে মানুষের উপকার করা যায়, এটা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এতে উৎসাহিত করেছেন।
আর একজন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন : আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুমিনের যেকোনো বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন।
হাদীসের গ্রন্থসমূহে বিপদগ্রস্ত ভাই-বোনদের সহায়তা করার আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রুকইয়াহ করার মাধ্যমে আপনি সেসব লুফে নিতে পারেন।
৪. কুফরের বিরুদ্ধে এবং তাওহিদের পক্ষে সংগ্রাম করা
ইবনু তাইমিয়্যার এজন্য মুখলিস রাকীদের ব্যাপারে বলেছেন—
وجنب الذنوب التي بها يسلطون عليه فإنه مجاهد في سبيل الله
وهذا من أعظم الجهاد فليحذر أن ينصر العدو عليه بذنوبه
‘রাকীর উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা, যেন এই সুযোগে জিন তার ওপর প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। সে তো আল্লাহর পথে একজন জিহাদকারী ব্যক্তি। আর রুকইয়াহ চর্চা করাও জিহাদের একটি উত্তম পদ্ধতি। তাই যতদূর পারা যায়, সতর্ক থাকা উচিত, যেন তার পাপ তার শত্রুকে বিজয়ী হতে সহায়তা না করে।
হাকিকী জিহাদের সঙ্গে রুকইয়াহচর্চার কোনো তুলনা যদিও হয় না, তবুও ইবনু তাইমিয়্যা -এর কথাটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন রাকী সমাজ থেকে কুফর-শিরক দূর করার জন্য নিজের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে মেহনত করে। আর যখন কুফরি জাদুতে আক্রান্ত কারও চিকিৎসা করে অথবা শয়তান ভর করা ব্যক্তির ওপর রুকইয়াহ করে, তখন সে আল্লাহর কালামের সাহায্যে সরাসরি শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
৫. তাওয়াক্কুল
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদীসে বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীসের মধ্যে এসব ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, আর বলেছেন, ‘এরা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে।’ আর এমন লোকদের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যারা রুকইয়ার জন্য অনুরোধ করে না, শুভ-অশুভ লক্ষণ নির্ণয় করায় না, ছ্যাঁকা দিয়ে চিকিৎসা করে না; বরং শুধু তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।
অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন যাদু বদনজরের রুকইয়াহ সেবা নিতে কল করুনঃ 01708732272
একজন রাকী এই হাদীসে উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার। কারণ, সে নিজেই রুকইয়াহ করে, অন্যের কাছে গিয়ে রুকইয়াহ করানোর প্রয়োজন তার নেই। আর সে আল্লাহর অনুগ্রহে জটিল জটিল সমস্যা সামাল দেয়, শক্তিশালী শয়তানদেরকে শায়েস্তা করে, ভয়ংকর সব জাদু নষ্ট করে। আর এতসব অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে স্রেফ আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা রেখে লড়াই চালিয়ে যায়। একের পর এক নুসরত প্রত্যক্ষ করে মুখলিস রাকীর ঈমান এক অনন্য স্তরে পৌঁছে যায়। বস্তুত, এটা এমন এক মেহনত, যেখানে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ব্যতীত কোনো দুনিয়াবি সাহায্য উপকারে আসে না।
মোটকথা, এভাবেই একজন রাকী তাওয়াক্কুলে পূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং তার জন্য খুবই যৌক্তিক, সে এই পুরস্কার আশা করতে পারে।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, রুকইয়াহ নিয়ে পড়াশোনা করতে বললে অনেকে ভাবে, ‘পুরো সমাজে শিরক-কুফর মিশ্রিত কবিরাজির ছড়াছড়ি। আমি একা রুকইয়াহ শিখে কী-ই বা করব!’ আমি তাদেরকে আল্লাহর বাণী মনে করিয়ে দিতে চাই :
قُل لَّا يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ فَاتَّقُوا اللَّهَ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ : বলে দিন, ‘ভালো এবং মন্দ সমান নয়; যদিও মন্দের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় করো; যাতে তোমরা সফল হও |’
এবং দাউদ -এর ঘটনা স্মরণ করুন :
قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُلاقُو اللَّهِ كَم مِن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةٌ كَثِيرَةً
بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থ : যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বারবার বলতে লাগল, কত সামান্য দলই আল্লাহর হুকুমে বিরাট দলকে পরাজিত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।