মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া ও চিকিৎসা পদ্ধতি।

মুখ দোষ বলতে আমরা যেটাকে বুঝাই তা হল আমাদের সমাজে কারো কথার মাধ্যমে বা হিংসাত্মক দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের শারিরীক, আর্থিক, ব্যবসায়িক যে ক্ষতি সাধন হয় তাকেই আমরা মুখ দোষ বলে থাকি। অর্থ্যাৎ হাদিসের ভাষায় যেটাকে আমরা বদনজর হিসেবে জেনে থাকি। মুখ দোষ বদনজর সত্য, এটা রাসুল (সা.) সহ আরো অনেক নবী রাসুলগনের যুগ থেকে চলে আসছে। বদনজর বা মুখ দোষের প্রভাবে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। তাই মুখ দোষ বা বদনজরকে সাধারণ সমস্যা না ভেবে সব সময় সতর্ক থাকা উচিৎ।

মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া ও চিকিৎসা পদ্ধতি।

আমাদের কোনো কারনে মুখ দোষ লাগলে, আমরা মসজিদের ঈমাম বা আমাদের আসে পাশের কোনো হুজুর বা আলেমের দারস্থ হই মুখ দোষের পানি পড়া নিয়ে আসতে। অথচ হাদিসে বর্ণিত রাসুল সা: এর অল্প কিছু আমল বা কুরআনের যাদু নষ্টের বিভিন্ন সুরার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই মুখ দোষের পানি পড়া তৈরী করতে পারি। আর তাই, আজকের এই রুকইয়াহ সেবার প্রবন্ধে আমরা মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অভিজ্ঞ রাকী বা হুজুরের মাধ্যমে জিন, যাদু, বদনজরের রুকইয়াহ সেবা নিতে যোগাযোগ করুনঃ 01708732272

মুখ দোষ থেকে বেচে থাকতে আমাদের করনীয় দুই ধরনের কাজ রয়েছে। প্রথমতঃ আমাদের দৈনন্দিন করা কিছু দুনিয়াবী কাজ সমূহ রয়েছে, যেগুলার মাধ্যমে মুখ দোষ লাগার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। মুখ দোষ যেহেতু মানুষের হিংসাত্মক দৃষ্টি বা মনে হিংসাত্মক ভাব নিয়ে কাউকে কোনো উক্তি করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক ভাবে চলা ফেরা করা উচিৎ। নিম্নে উল্লেখিত কাজ সমূহ পরিহার করার মাধ্যমে আমরা মুখ দোষ থেকে কিছুটা হলে ও বেচে থাকতে পারবো।

মুখ দোষ থেকে বেচে থাকতে বর্জনীয় দুনিয়াবী কাজ সমূহ:

১) সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ও পরিবারের ছবি সমূহ আপলোড দেওয়া থেকে বিরত রাখা। এই কাজটি করার মাধ্যমে যেমনি আপনারা পর্দার গুনাহ থেকে বাচতে পারবেন। ঠিক তেমনি কিছুটা হলে ও মুখ দোষ বা বদনজরের প্রভাব থেকে বাচতে পারবেন।
২) সোশ্যাল মিডিয়ায় খাওয়া দাওয়া ঘুরাঘুরি ইত্যাদির ছবি প্রকাশ না করা।
৩) নিজেদের সুখ শান্তি ভালো থাকা ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করা।
৪) পরিবারের সদস্য যেমন: মা বাবা ভাই বোন স্বামী সন্তান এদের প্রশংসা যত্রতত্র না করা।
৫) নিজেদের আয় উন্নতি কথা কারো কাছে শেয়ার না করা।

এছাড়াও এই ধরনের যত কাজ সমূহ রয়েছে যেগুলা বলার মাধ্যমে বা দেখানোর মাধ্যমে আমাদের আশেপাশের হিংসাত্মক লোকদের কুদৃষ্টি বা তাদের হিংসাত্মক উক্তির মাধ্যমে মুখ দোষ বা বদনজর লাগতে পারে, সেই সকল কাজ সমূহ পরিহার করা উচিৎ। তাহলে আমরা প্রথম ধাপে কিছুটা হলে ও মুখ দোষ থেকে বেচে থাকতে পারবো।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে আমাদের রাসুল সা: এর দেখানো পদ্ধতি গুলো অনুসারন করা। এই ধাপ অনুসারণ করার মাধ্যমে ইন শা আল্লাহ বদনজর বা মুখ দোষ এর প্রভাব আমাদের ধারে কাছে ও আসতে পারবে না। নিম্নে নিয়মরীতি গুলো উল্লেখ করা হলো।

মুখ দোষ থেকে বেচে থাকতে ইসলামিক নিয়মরীতিঃ

১) সব সময় হালাল খাবার ভক্ষণ করা।
২) সর্বদা আল্লাহর জিকিরে ব্যাস্ত থাকা।
৩) পাচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা।
৪) পাচ ওয়াক্ত নামাজের পর দৈনন্দিন হেফাজতের আমল সমূহ করা।
৫) কোন কিছু বলার পূর্বে বা পরে সব সময় আল্লাহর নাম উউচ্চারণ করা। যেমন: আলহামদুলিল্লাহ, মাশা আল্লাহ, ইন শা আল্লাহ ইত্যাদি।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমরা উপরে উল্লেখিত নিয়মরীতি অনুসরণ করার মাধ্যমে বদনজরের প্রভাব রুখে দিতে পারবো।  ইন শা আল্লাহ,  এই দুইটা পদ্ধতি অনুসারন করার মাধ্যমে মুখ দোষ বা বদনজর এর প্রভাব কোনো ভাবেই আমাদের ছুতে পারবেনা।

মুখ দোষ লাগলে বুঝবো কিভাবে :

মুখ দোষ বা বদনজরের অনেক লক্ষন রয়েছে যেমন: শরীরের সাধারণ দুর্বলতা থাকা, ক্ষুধা হ্রাস এবং বমি বমি ভাব। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, জ্বর থাকা [থার্মোমিটার না উঠা]।কারণ ছাড়াই কান্নাকাটি করা, কাজকর্মে মনোযোগ না বসা ইত্যাদি। এই সকল বদনজরের লক্ষন সমূহ যদি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে আমরা ধরে নিবো আমাদের মুখ দোষ লেগেছে। বদনজরের সকল লক্ষণ সমূহ দেখতে এই আর্টিকেল টি পড়ুনঃ বদনজরের লক্ষণ সমূহ।

মুখ দোষের সহজ চিকিৎসা :

মুখ দোষের চিকিৎসা খুবই সহজ। যার মাধ্যমে আমাদের মুখ দোষ লেগেছে তাকে যদি আমরা শনাক্ত করতে পারি, তাহলে তার হাত ধোয়া পানি বা অজুর পানি দিয়ে গোসল করলেই আমাদের মুখ দোষ সেরে যাবে। আর যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে না পারি, তখন দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করবো অর্থ্যাৎ রুকইয়াহ করবো, মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া দিয়ে পানি ও তেল তৈরী করবো। এইগুলা খাবো ও ব্যবহার করবো।

অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু, নজরের কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে যোগাযোগ করুন এই নাম্বারেঃ  01708-732272

মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া সমূহ:

মুখ দোষ বা বদনজর এর জন্য হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়া ও কুরআনিক কিছু সুরা রয়েছে, যেইগুলার মাধ্যমে আমরা মুখ দোষের রুকইয়াহ করতে পারবো এবং মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া দিয়ে পানি ও তেল, দুইটাই তৈরী করতে পারবো।

হাদিসে বর্ণিত মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া সমূহ:

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ’ঈযুকুম বিকালিমা তিল্লা হিত্তাম্মাতি, মিন কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়া হাম্মাতি, ওয়ামিন কুল্লি আ’ঈনিল্লা-ম্মাতি।

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَيْهِ وَأَذْهِبْ عَنْهُ حَرَّ الْعَيْنِ وَبَرْدَهَا وَوَصَبَهَا
আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলাইহি ওয়া আযহিব ‘আনহু হাররিল ‘আইনি ওয়া বারদাহা ওয়া ওয়াসাবাহা

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيْكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ
বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিকা ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ, ওয়া শাররি কুল্লি যি ‘আইন

اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক্, মিন্ কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক্। মিন্ শার্রি কুল্লি নাফসিন্ আও আ’ইনি হাসিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক্, বিসমিল্লা-হি আরকীক্।

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক্, ওয়ামিন কুল্লি দা-ই ইয়াশফীক। ওয়ামিন শার্রি হাসিদিন ইযা- ‘হাসাদ। ওয়া শার্রি কুল্লি যী “আঈন ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স আযহিবিল বা’স , আশফি ওয়া আনতাশ শা-ফী লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউকা শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা।

কুরআনে বর্ণিত মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া বা সুরা সমূহ:

১) আয়তুল কুরসি। (৩ বার)
২)সুরা ইখলাস। (৩ বার)
৩) সুরা ফালাক। (৩ বার)
৪) সুরা নাস। (৩ বার)
৫) সুরা বাকারা। আয়াতঃ ১০২ (৩ বার)
৬) সুরা আরাফ, আয়াতঃ ১১৭-১২২ (৩ বার)
৭) সুরা ইউনুস, আয়াতঃ ৮১ – ৮২ (৩ বার)
৮) সুরা ত্বহা, আয়াতঃ ৬৯ (৩ বার)

মুখ দোষের রুইইয়াহ করার নিয়ম:

দুরুদ শরীফ ও সুরা ফাতিহার সহিত, উপরে বর্ণিত মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া ও সুরাহ সমূহের মাধ্যমে প্রতিদিন সর্বোনিম্ন ২০ মিনিট, সর্বোচ্চ যতক্ষন পারা যায়, পড়ে নিজেকে অথবা কোনো রোগীকে ঝাড়ফুঁক করবো। এবং এইটা নিয়মিত এক সপ্তাহ করলেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।

শত্রুকে ধ্বংস করতে এই আর্টিকেল টি পড়ুনঃ জিন কবিরাজ ও মানব শত্রুকে ধ্বংস করার কুরআনিক আমল:

মুখ দোষের পানি পড়া তৈরী করার নিয়ম:

দুরুদ শরীফ ও সুরা ফাতিহার সহিত, উপরে বর্ণিত মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া ও সুরা সমূহ প্রতিটি যতবার বার পাঠ করবেন, ততবার পানিতে ফু দিবেন। প্রতিটি দোয়া বা সুরা সর্বোনিম্ন ৩ করে পাঠ করলে বেশি ভালো হয়। এর চেয়ে বেশি পাঠ করতে পারলে আরো বেশি কাজে দিবে। আপনি যদি সব গুলো দোয়া বা সুরা না পারেন সমস্যা নেই, মুখ দোষের নিয়ত করে দুরদ শরীফ ও সুরা ফাতিহার সহিত শুধু মাত্র আয়তুল কুরসি বা ৩ কুল এর মাধ্যমে অথবা ৩ কুলের যেকোনো একটি সুরা, যেমনঃ সুরা ফালাক এর মাধ্যমে ফু দিয়ে তৈরী করলেও মুখ দোষের পানি তৈরি হয়ে যাবে। একই নিয়মে তেল পড়া ও তৈরী করা যাবে।

মুখ দোষের পানি ও তেল ব্যবহারের নিয়ম:

মুখ দোষে আক্রান্ত ব্যাক্তি পড়া পানি প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাবে। আর পড়া তেল গোসলের পর ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে শরীরে মাখবে। আর যদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, পালিত পশু পাখি ফলফলাদির গাছ সমূহ মুখ দোষ বা বদনজরে আক্রান্ত হয়, তাহলে ঐ সমস্ত জায়গায় মুখ দোষের পানি পড়াটা ছিটিয়ে দিবে। এই কাজটি এক সপ্তাহ করলেই ইন শা আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

মুখ দোষের গোসলের পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিটি অনুসরণ না করলে ও চলবে। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই মুখ দোষে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সহজেই সুস্থ হয়ে যায়। এর পরে ও জেনে রাখার জন্য পদ্ধতি টি শিখিয়ে দিচ্ছি। মুখ দোষের প্রভাব যদি খুব বেশি হয়ে থাকে এবং আপনি যদি অতি দ্রুতই সুস্থতা লাভ করতে চান তাহলে মুখ দোষের গোসলের পদ্ধতিটি ও অবলম্বন করতে পারেন। এর জন্য এক বালতি পানি নিয়ে উপরে বর্ণিত মুখ দোষের পানি পড়ার দোয়া ও কুরাআনের সুরা গুলো পড়ে বালতির পানিতে ফু দিবেন। এর পর এই পানি দিয়ে সরাসরি গোসল করে ফেলবেন। এই নিয়মটিও ৭ দিন অনুসরণ করবেন। ইন শা আল্লাহ আপনি অতিদ্রুতই সুস্থতা লাভ করবেন।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল ধরনের মুখ দোষ, বদনজর, বালা মুসিবত থেকে হেফাজতে রাখুন। এবং আমরা যেনো কুরআন সুন্নাহর আলোকে আমাদের জীবন গঠন করতে পারি সেই তৌফিক দান করেন। আমীন।

অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু, নজরের কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে যোগাযোগ করুন এই নাম্বারেঃ  01708-732272

Leave a Comment