মানুষের ভালো কোনো বিষয় দেখে কেউ যদি অতিমুগ্ধতা বা হিংসার দৃষ্টিতে তাকায়, কিংবা ভালো কিছু শুনে আশ্চর্যবোধক মন্তব্য করে, আর তখন আল্লাহর নাম না নেয়, তাহলে নজর লাগতে পারে। আর কেউ যদি কারও নিয়ামত দেখে আল্লাহর প্রশংসা করে, বরকতের দুআ করে, তাহলে নজর লাগে না ৷
বদনজরের সাথে এখানে আরেকটি বিষয় আলোচনায় আসে—হিংসা। আরবিতে বলে ‘হাসাদ’। হিংসা মূলত কারও কোনো নিয়ামত দেখে মন থেকে সেটার ক্ষতি কামনা করা। হিংসার বশবর্তী হয়ে কারও সম্পদের দিকে তাকালেও নজর লাগতে পারে। না তাকিয়ে অনিষ্টের চিন্তা করতে করতেও লাগতে পারে। তবে পূর্বে যেমন বলা হয়েছে, হিংসা ছাড়া একেবারে অনিচ্ছাকৃতভাবেও নজর লাগে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিকবার বদনজরের সাথে ভাগ্যের তুলনা করেছেন। যেমন : ‘আল্লাহর ফয়সালা এবং ভাগ্যের পরে আমার উম্মত সবচেয়ে বেশি মারা যাবে বদনজরের কারণে। অথবা ‘ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায়—এমন কিছু যদি থাকত, তবে তা হতো বদনজর।
তাই আমরা বলতে পারি, নজর লাগার ব্যাপারটা কিছুটা ভাগ্যের মতো। অর্থাৎ ভাগ্য যেমন রোগ-ব্যাধি থেকে শুরু করে মৃত্যুর কারণ হয়, তেমনই নজর প্রথমে হয়তো মারাত্মক কোনো উপসর্গের কারণ হয়, তারপর সেখান থেকে প্রাণঘাতী জটিল কোনো রোগ হয়, আর তারপর কবর। কিংবা নজরের কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে, যার ফলে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। তাহলে কিভাবে ‘বদনজর উটকে পাতিলে, আর মানুষকে কবরে পৌঁছে দেয়’—আশা করছি, তা এখন অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে।
ইবনুল কায়্যিম -এর মন্তব্য এরকম, ‘কুদৃষ্টির উদাহরণ সেই বিষাক্ত তিরের মতো, যা একসাথে অনেকগুলো ছোড়া হয়; কিন্তু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে তার অধিকাংশই ব্যর্থ হয়। হিংসুকদের প্রতিটি দৃষ্টি, প্রতিটি ঈর্ষাকাতর চাহনি কিংবা অতিমাত্রার মুগ্ধতা, যেখানে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না—এ সবই বদনজরের উৎস। তবে কেউ মাসনুন দুআ-যিকির ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা করলে এসবে সহজে আক্রান্ত হয় না।’
তবে সাধারণত নজর লাগে বিরল, অপ্রসিদ্ধ কিংবা হঠাৎ পেয়ে যাওয়া বস্তুতে।
উদাহরণস্বরূপ : কেউ ভালো কণ্ঠের জন্য কিংবা অঢেল টাকাপয়সার জন্য দুনিয়া জুড়ে বিখ্যাত, তার এসব জিনিসে নজর লাগবে না—এটাই স্বাভাবিক। কোনো এলাকায় সবারই ২-৪ তলা বাড়ি, এখানে কেউ ৫ তলা বাড়ি করলেও তা স্বাভাবিক ব্যাপার; এখানে নজর লাগার কথা নয়। কিন্তু আপনি এমন এলাকায় গিয়ে বিলাসবহুল ৩ তলা বাড়ি বানালেন, যেখানে ভালো কোনো একতলা বাড়িই দুর্লভ। খুবই সম্ভাবনা আছে, আপনার বাড়িতে নজর লাগবে, সেখানে আপনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না। আর সেই বাড়িতে থাকলে পরিবারে ঝগড়া লেগেই থাকবে।
আরেকটি বিষয় হলো, কিভাবে জিনের নজর মানুষের ওপর লাগে?
অনেক রাতে বা ভর দুপুরে জনমানবহীন রাস্তা কিংবা পুকুর পাড় দিয়ে চলাচলের সময়, সেখানে থাকা খারাপ জিনরা মানুষের দিকে মনোযোগী হতে পারে। তখন ওই ব্যক্তি যদি দুআ না পড়ে, কিংবা সকাল-সন্ধ্যার হেফাজতের আমল না করে, সে ক্ষেত্রে জিনের নজর লাগার ঝুঁকি থাকে।
বাচ্চারা সন্ধ্যার সময় বাইরে দৌড়াদৌড়ি করে, ছাদে বা জানালার ধারে বসে থাকে, (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এসময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে।) তখনো জিনের নজর লাগতে পারে। যাদের বাড়ির আশেপাশে মন্দির কিংবা মণ্ডপ থাকে, সতর্ক না থাকলে তারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। কেননা, এসব উপাসনালয়ে অসংখ্য শয়তানের আনাগোনা থাকে।
এ ছাড়া অনেক উঠতি বয়সি ছেলেরা প্যারানরমাল বিষয় নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগে, এরপর অভিজ্ঞ কোনো আলিমের দিক-নির্দেশনা ছাড়া, হেফাজতের আমল ঠিকঠাক না করেই জাদু কিংবা জিন-ভূত নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময় তাদের চারপাশে বসবাসকারী জিনেরা তাদের দিকে মনোযোগী হয়! ফলে এমন তরুণরা অহরহ জিনের নজরে আক্রান্ত হয়। কেউ কেউ জিনের আসরের শিকারও হয়।