প্রথমেই আমরা সূরা বনী-ইসরাঈল এর ৮২ নং আয়াত দিয়ে শুরু করছি।
وَنُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا ہُوَ شِفَآءٌ وَّرَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَلَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا
অর্থ: আমি নাযিল করছি এমন কুরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শেফা ও রহমত। তবে জালেমদের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি হয় না।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনের সকল কিছুর সমাধান মহাগ্রন্থ আল কুরআনে দিয়ে দিয়েছেন।কোনো কিছুতেই আমাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারন নেই। সুতরাং সব সময় আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে সুখে দুঃখে হাসি কান্নায়, আনন্দ বেদনায় মহান আল্লাহকে স্মরণ করবো এবং উনার কাছেই সাহায্য কামনা করবো।
এইবার আসা যাক মূল আলোচনায়। জিন, যাদু, কুফরি, বান ইত্যাদি সমস্যার সাথে লড়াই করতে করতে আপনি হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। সমস্যা সমধানের কোনো কুল কিনারা খুজে পাচ্ছেন না। বার বার যাদুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বার বার চালান করে জিন পাঠানো হচ্ছে। বা আপনার ঘরের শত্রুই আপনাকে বার বার যাদু মেশানো খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। স্বপ্নে ও খাবার খেয়ে বার বার যাদুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, যতই চিকিৎসা গ্রহন করেন কিছুদিন সুস্থ থেকে আবার আগের রুপে ফিরে যাচ্ছেন। শ্ত্রু আপনার পিছুই ছাড়ছেনা। খুবি মজলুম অবস্থায় আছেন। ইন শা আল্লাহ চিন্তার কোনো কারন নেই, আপনাদের জন্যই আজকের এই রুকইয়াহ সেবার প্রবন্ধটি উৎসর্গ করা হলো।
জিন, কবিরাজ, মানব শয়তান কে ঘায়েল করার অনেক কুরআনি আমল রয়েছে, কিন্তু আজকে আমি আপনাদেরকে আমার নিজের পরিক্ষিত খুবই সহজ, একটি মাত্র আয়াতের কুরআনিক আমল ও নিয়ম রীতি বলে দিবো, ইন শা আল্লাহ যেই আয়াতের শক্তিতে আপনার শত্রু ঘায়েল হতে বাধ্য থাকবে। কুরআনের এই শক্তিশালী আয়াত টি জিন, যাদুকর, মানব শত্রুর জন্য অভিশাপ।
কখন অভিশাপের আমল করা সম্পুর্ণ নিষেধ:
প্রাথমিক অবস্থায় লানতের আমল গুলো করা সম্পুর্ণ নিষেধ করা হয়ে থাকে। কারন: যখন শত্রুর উপর এই আমল গুলোর ইফেক্ট পড়া শুরু হয়ে থাকে। তখন মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে শত্রুদের জীবন দুনিয়াতেই জাহান্নামে পরিনত হয়ে যায়। তাই যার যতটুকু অপরাধ তার জন্য ততটুকুই শাস্তি গ্রহণযোগ্য। প্রাথমিক অবস্থায় আমরা রুকইয়াহ সেবা গ্রহন করবো।
অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু , কুফরী, বান, বদনজর, হাসাদ ইত্যাদির রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে কল করুন এই নাম্বারেঃ 01708-732272
অনেক সময় জিন মজলুম হয়ে থাকে, তাদেরকে কবিরাজ যাদুর গিট দিয়ে রোগীর শরীরে বেধে রাখে, যার কারনে অনেক সময় এই জিনগুলো অনিচ্ছাকৃত সত্ত্বেও রোগীর ক্ষতি করে থাকে এবং এই জিনগুলো রোগীর শরীর থেকে বের হতে পারে না। আবার কখনো দূর্বল জিনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বা তাদের স্বজনদের আটকে রেখে তাদের দিয়ে রোগীর ক্ষতি করায়, যা একপ্রকার তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করানো হয়। তাই প্রথমেই কাজ হচ্ছে রোগীর যাদু নষ্ট করে এইসব জিন দের বের করে দেওয়া। তখন রোগী আল্লাহর রহমতে এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবে।
এই জন্য প্রাথমিক অবস্থায় আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ পদ্ধতি গ্রহণ করবো। ধৈর্য্যধারন করে আমরা সুস্থতার নিয়তে রুকইয়াহ করে যাব। বেশিরভাগ সময়েই আমরা রুকইয়াহ সেবা গ্রহণ করার মাধ্যমেই সুস্থ হয়ে যাই এবং জিন যাদু কবিরাজ এর প্রতি অভিশাপের দোয়া বা আমলের দিকে যেতে হয়না।
কখন আমরা অভিশাপের আমল গুলো করবো:
যখন আমরা রুকইয়াহ করে বার বার ব্যর্থ হবো, বার বার চালান জিন দ্বারা আক্রান্ত হলে। আমাদের শত্রু বার বার আমাদের কুফরী বান যাদু করলে। বার বার দুষ্টু কবিরাজের দ্বারস্থ হলে। শত্রু সর্বদাই আমাদের পিছনে লেগে থাকলে, তখনই লাস্ট স্টেজে গিয়ে, কবিরাজ, জিন, মানব শত্রুর জন্য অভিশাপের দোয়া বা আমল গুলো করবো। এর আগে কখনই এই আমল করা যাবে না।
অভিশাপের দোয়া বা আমল করার সময় কি কি সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে:
অভিশাপের আমল গুলো জিন, যাদুকর, মানব শত্রুর লাইফস্টাইল লণ্ডভণ্ড করে দেয়। এদের জীবনকে জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ে। এইজন্য যখন আমরা অভিশাপের আমল গুলো করি, তখন জিন, কবিরাজ, এরা পাল্টা আক্রমণ করে থাকে বাচার জন্য। আমল কারীর পিছনে সর্বদা লেগে তাকে এটাক করার জন্য। আর তাই এই আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কতিপয় গাইডলাইন মেনে চলতে হবে। যথাঃ
১) সর্বদা অযু অবস্থায় থাকাটা উত্তম।
২) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত মসজিদে আদায় করা, মহিলা হলে ঘরে আদায় করা।
৩) দৈনন্দিন সকাল সন্ধ্যার আমল বা জিকির আযকার করতে হবে।
৪) প্রতি ওয়াক্ত নামাজের শেষে আয়তুল কুরসি, তিন কুল পড়ে শরীর বন্ধ করা।
৫) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে এই দোয়াটি ৩ বার পাঠ করা। আউযু বিকালিমাতিল্লাহি তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।
৬) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে এই দোয়াটি ৩ বার পাঠ করা। আউযুবি কালিমা তিল্লাহি’ত তাম্মা, মিন কুল্লি শাইত্বানি ওয়া হাম মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আই ইন নিল লাম মাহ।
৭) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে এই দোয়াটি ৩ বার পাঠ করা। বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
৮) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে সুরা বাকারার শেষের ২ আয়াত পাঠ করা।
৯) প্রতি ওয়াক্ত সালাতের শেষে সুরা মুমিনুন এর শেষের চার আয়াত পাট করা।
১০) দৈনিক ১০০ বার এই দোয়াটি পাঠ করা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
১১) বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করা।
১২) সকল ধরনের হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।
১৩) ঘুমানোর পূর্বে অযুর করে আয়তুল কুরসি, তিন কুল, এবং আল্লাহর কাছে হেফাজতের নিয়ত করে বেশি বেশি জিকির আযকার বা আমল করে সর্বশেষ ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া।
ইন শা আল্লাহ এই সকল গাইডলাইন গুলো মেনে চললে পৃথিবীর কোনো অনিষ্ট শক্তি নেই যে আপনার ক্ষতি করতে পারবে।
অভিশাপের দোয়া বা আমল করার নিয়ম:
অভিশাপের আমল করার সময় আমরা কখনই নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম নিয়ে আমল করবোনা, এইটা সম্পূর্ণ নিষেধ। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা থাকবে। কারন আমরা যাকে শত্রু ভেবে সন্দেহ করে আমল গুলো করবো, হয়তো শত্রু সেই ব্যক্তি নাও হতে পারে। তখন উলটো নিজেই গুনাহগার হবো। আর এই সকল ক্ষেত্রে দোয়া কবুল না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি থাকে।
আমরা একটি পাক পবিত্র জায়গায় বসে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ( নির্জন জায়গা হলে বেশি ভালো হয়) সুস্থতার নিয়তে খাস দিলে মনে মনে এই নিয়ত করবো, হে আল্লাহ যেই জিন শত্রু, কবিরাজ শত্রু, মানব শত্রু আমাকে বা আমার পরিবারকে বার বার ক্ষতি গুলো করতেছে, তাদেরকে হয় আপনি হেদায়েত দিন, না হলে ধ্বংস করে দিন। এরপর ৩ বার দুরুদ শরীফ পড়বো, তারপর চোখ বন্ধ করে কুরআনের সেই মহিমান্বিত আয়াত টি বার বার পাঠ করতে থাকবো শত্রুকে ধ্বংসের নিয়তে। সর্বোনিম্ন ২০ মিনিট সর্বোচ্চ যতক্ষন করতে পারি। এইভাবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এই আমল টি করবো।
আর এছাড়া সারাদিন যতক্ষন পারা যায়, হাটতে, বসতে, চলতে, ফিরতে এই আয়াত টি পাঠ করতে থাকবেন। তখন চোখ বন্ধ রাখতে হবে না। নির্দিষ্ট সময় ব্যাতিত চোখ খোলা অবস্থায় সারাদিন এই আয়াত টি পাঠ করবেন শত্রুকে ধ্বংসের নিয়তে। এই ভাবে টানা ১ মাস করবেন। এই আমলটি দোয়া কবুলের যে সকল সময় রয়েছে, সেই সকল সময়ে বেশি বেশি করার চেষ্টা করবেন, যেমন তাহাজ্জুদের সময়, আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, আযানের সময় ইত্যাদি এই সকল সময়ে বেশি বেশি পাঠ করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এবং শত্রু অতি দ্রুতই ধ্বংস হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। সারাদিনে যত বেশি এই আয়াত টি পাঠ করবেন, আপনার শত্রু ততই দ্রুত ঘায়েল হবে ইন শা আল্লাহ। আয়াত টি হচ্ছেঃ সূরা ফাত্বির ( আয়াত নং – ২৬ )
ثُمَّ اَخَذۡتُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَکَیۡفَ کَانَ نَکِیۡرِ ﴿۲۶ উচ্ছারণঃ ছুম্মা আখয তুল্লাযীনা কাফারূ ফাকাইফা কা-না নাকীর।
অর্থঃ তারপর যারা কুফরী করেছিল তাদেরকে আমি পাকড়াও করেছিলাম; অতএব কেমন ছিল আমার শাস্তি?!
এই একটি মাত্র আয়াতের আমলের মাধ্যমে আমার নিজের দেখা, শত্রু রোগীর কাছে এসে মাফ চাইতে বাধ্য হইছে। আরেক দিকে শত্রুর সন্তান পাগল হয়ে গেছে। আরেকদিকে শত্রু সে নিজেই পাগল হয়ে গেছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল, সঠিক ভাবে খাস নিয়তে করতে পারলে ইন শা আল্লাহ শত্রু ঘায়েল হতে বাধ্য।
মহান আল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই ধরনের সকল শত্রু থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুক। সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত, সকাল সন্ধ্যার আমল সমুহ যেনো সঠিক ভাবে পালন করতে পারি। এবং সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি। মহান রবের কাছের এই আর্জি করে আজকের রুকইয়াহ সেবার প্রবন্ধটি এখানেই শেষ করছি।
2 thoughts on “জিন, কবিরাজ ও মানব শত্রুকে ধ্বংস করার কুরআনিক আমল।”