বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ – লক্ষণ ও প্রতিকার

হিংসাত্মক দৃষ্টি বা কুদৃষ্টির কারনে মানুষ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাই হচ্ছে বদনজর। বদনজরের রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা টাই বেশি দেখা যায়। যেহেতু বদনজরের উৎপত্তি টা হচ্ছে, হিংসাত্মক দৃষ্টি বা কুদৃষ্টি থেকে। তাই এর প্রভাবটা বেশি বাচ্চাদের উপরেই পড়ে। কারণ আমাদের শিশু বাচ্চা গুলো অনেক কিউট, দেখতে সুন্দর বা অনেক মেধাবী অথবা ছোট অবস্থাতেই অনেক গুনাবলীর অধিকারী হওয়াতে তা আমাদের চারপাশের মানুষদের অগোচরে আসলে, তাদের মধ্যে ম্যাক্সিমাম মানুষেই ভালো দৃষ্টিতে না দেখে হিংসাত্মক মনোভাব বা কুদৃষ্টি নিয়ে তাকায়, আর তখন সাথে সাথেই শিশুরা বদনজরে আক্রান্ত হয়ে যায়।

বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ

বদনজরের রুকইয়াহ চিকিৎসা যেহেতু অন্যান্য জিন, যাদুর, হাসাদ, ইত্যাদির চিকিৎসার মত কষ্টসাধ্য না, অনেক সহজেই নিরুপায় করা যায়, তাই এটাকে হালকা ভাবে নিয়ে আবার কালক্ষেপণ করা উচিৎ নয়। কারন বদনজর সম্পর্কে আমাদের রাসুল (সাঃ) এর হাদিস রয়েছে; জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ العين تدخل الرجل القبر وتدخل الجمل القدر ।

অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে । (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯)

অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয় ।

সুতরাং আমরা সর্বো অবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বদনজর থেকে বেচে থাকার দোয়া করবো এবং বদনজরে আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে অতদ্রুতই বদনজরের সেলফ রুকাইয়া করবো। অথবা বিশ্বস্ত কোনো রাকী থেকে রুকইয়াহ সার্ভিস নিবো।

অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন যাদু বদনজরের  রুকইয়াহ সেবা নিতে কল করুনঃ  01708732272

বদনজর থেকে আমাদের শিশুদেরকে হেফাজত করার জন্য কতিপয় নিয়মরীতি যা আমাদের মেনে চলা উচিৎ।

১) আমাদের শিশুদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার বা পোস্ট না করা।
২) শিশুদেরকে সব সময় হিংসাত্মক মানুষদের থেকে দূরে রাখা।
৩) শিশুদের রুপ গুন মেধার প্রশংসা যত্রতত্র না করা।
৪) যে কেউ আমাদের শিশুদের প্রশংসা করলে যেনো মহান আল্লাহ তায়ালার নাম নেয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা। যেমন: মাশাল্লাহ সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি।
৫) আমরা নিজেরাও যখন আমাদের শিশুদের প্রশংসা করবো, আমরা ও যেনো আল্লাহ তায়ালার নাম নেই সেই দিকে লক্ষ্য রাখা।

বদনজরের লক্ষণ সমূহ:

একজন ব্যাক্তির মধ্যে যদি নিম্নে দেওয়া বেশিভাগ বদনজরের লক্ষণ সমূহ মিলে যায়, এবং সে ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়ে কোন সুফল পাচ্ছে না, তাহলে তাকে বুঝে নিতে হবে তার বদনজর লেগেছে।

১।শরীরে জ্বর জ্বর ভাব থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা।
২। কোন কারন ছাড়াই নিজে থেকে কান্না আসা
৩। শরীর দুর্বল থাকা, বমি বমি ভাব লাগা।
৪। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
৫। অস্বস্তি ফিল করা।
৬। কোন কারন ছাড়াই মেজাজ বিগড়ে থাকা।
৭। বাবা মা ভাই বোনের সাথে দেখা করতে ভালো না লাগা।
৮। অতিরিক্ত চুল পড়া।
৯। বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা। (যা কোন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না।
১০। ব্যবসায় ঝামেলা লেগেই থাকা ,কোন উন্নতি না হওয়া।
১১। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেটা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া।

শিশুদের বদনজরের লক্ষন সমূহ:

শিশুরা যখন বদনজরে আক্রান্ত হয় তখন তাদের মধ্যে এই লক্ষণ গুলো বিদ্যমান পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়ে ও কোনো সুফল পাওয়া যায়না। শিশুদের বদনজরের লক্ষন সমূহ নিম্নে দেওয়া হলঃ

১) শিশুরা মায়ের বুকের দুধ ও খাবার খেতে না চাওয়া এবং সাধারণ কিছুতেই চমকে ওঠা।
২) অহেতুক খুব ভয় পাওয়া।
৩) অস্বাভাবিক কান্নাকাটি করা।
৪)একদম সুস্থ বাচ্চা হঠাৎ করেই নেতিয়ে পড়া।
৫) হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যহানি হওয়া।
৬)গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যাওয়া
৭)জেদ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি ।

রিলেটেড আর্টিকেলঃ মুখ দোষের দোয়া।

বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ বা চিকিৎসা :

বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ করা তুলনামূলক অনেক সহজ হয়, যেহেতু বাচ্চাদের কোনো গুনাহ থাকে না তাই অল্পতেই উপকার হয় বেশি। এবং অতিদ্রুতই সুস্থতা লাভ করে।

বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার জন্য প্রথমেই আমরা বাচ্চার শরীরে কোনো তাবিজ কবজ ইত্যাদি থাকলে এইগুলো আমরা খুলে ফেলে নষ্ট করে দিবো। তাবিজ কবজ শরীরে থাকলে রুকইয়াহ এর সফলতায় বাধার সৃষ্টি হয়। ঘরে কোন প্রাণীর ছবি, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র বা এমন কিছু যেন না থাকে, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে প্রতিবন্ধক। যেহেতু সমস্যা অনেক কারণেই হয়, তাই নির্দিষ্টভাবে বদনজরের নিয়াত না করে, যে সমস্যা হচ্ছে সেই নিয়াতে রুকইয়াহ করাই ভালো। তবে নিশ্চিতভাবে বোঝা গেলে ভিন্ন কথা। এর পর আমরা চিকিৎসা আরম্ভ করে দিবো।

নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা শিশুদের বদনজরের রুকইয়াহ বা চিকিৎসা দুইভাবে করতে পারিঃ

প্রথম পদ্ধতি: যে ব্যাক্তির মাধ্যমে আমাদের শিশুর বদনজর লেগেছে, এইটা যদি আমরা শনাক্ত করতে পারি। তাহলে সেই ব্যাক্তির অজুর পানি, বা গোসলের পানি অথবা হাত দোয়ার পানি  সংগ্রহ করে আমাদের শিশুকে গোসল করিয়ে দিলেই ইনশা আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: কুরআনের আয়াত ও হাদিসে বর্নিত দোয়া দারা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুক করা। প্রথম পদ্ধতিটি যদি আমাদের অনুসরণ করা সম্ভব না হয়। তাহলে নিম্মে বর্নিত প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা করবো। এইটা আমরা নিজেরাও করতে পারি, অথবা কোনো অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে ও করাতে পারি। জিন, যাদু, বদনজর, ইত্যাদির রুকইয়াহ সেবা নিতে কল করুনঃ 01708-732272

আমরা আমাদের শিশুদের বদনজরের রুকইয়াহ সেবা দেওয়ার জন্য ৭ দিনের একটি নিয়মরীতি ফলো করবো। অর্থাৎ অনেকটা এন্টিবায়োটিক কোর্সের মতন। নিম্নে বর্নিত দোয়া গুলো পড়ে টানা ৭ দিন আমাদের শিশুদের ঝাড়ফুক করে বদনজরের রুকইয়াহ করবো। এবং প্রথমদিন ঝাড়ফুকের সময় একটি ছোট সরিষার তেলের বোতল ও পানির বোতল নিয়ে রাখবো। রুকইয়ার দোয়া গুলো পড়ে পড়ে বাচ্চার গায়ে, বোতলের পানিতে ও তেলে ফু দিবো। বাকি ছয়দিন শুদু বাচ্চাকে রুকইয়াহ এর দোয়া পড়ে ঝাড়ফুক করবো।

পানি পড়াঃ ঝাড়ফুঁক করা পানি গুলো আমরা সব সময় বাচ্চাকে খাওয়াবো, সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, ও রাতে যখনি সময় পাবো বাচ্চাকে অল্প অল্প করে খাইয়ে দিবো। বোতলের পানি শেষ হওয়ার আগেই আবার ভরাট করে ফেলবেন অর্থাৎ পড়া পানি হালকা পরিমাণ থাকা অবস্থায় আবার নতুন পানি দিয়ে বোতলটি ভরাট করে নিবেন। এই ভাবে টানা ৭ দিন বাচ্চাকে খাওয়াবেন।

তেল পড়াঃ ঝাড়ফুঁক করা তেল গুলো বাচ্চার সমস্ত শরীরে গোসলের পর মালিশ করবেন। এবং রাতে ঘুমানো পূর্বে সমস্ত শরীরে মালিশ করেবন। এইভাবে টানা ৭ দিন চলবে।

গোসলঃ বাচ্চাকে যখন গোসল করাবেন, তখন বাচ্চার গোসলের পানিতে বোতলের পড়া পানি কিছু মিক্স করে দিবেন। তারপর ওই পানি দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলবেন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে বালতিতে রুকইয়াহ এর আয়াত গুলো পড়ে ফু দিবেন। তাহলে সফলতা তাড়াতাড়ি আসবে। এইভাবে টানা ৭ দিন নিয়ম টি পালন করবেন। ইন শা আল্লাহ রোগী অতি দ্রুতই সুস্থতা লাভ করবে।

 বদনজরের রুকইয়াহ এর আয়াত গুলো:

নিন্মে বর্ণিত দোয়া ও সূরাগুলো প্রতিটা ৩ বার  পাঠ করে বাচ্চার মাথায় বা বুকে হাত রেখে ফুঁ দিবেন। এই পদ্ধতি ছোট বাচ্চা-বয়স্ক, ছেলে-মেয়ে সবার জন্য প্রযোজ্য ।

দুরদ শরীফ ( দুরুদে ইব্রাহিম) ৩ বার।

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ’ঈযুকুম বিকালিমা তিল্লা হিত্তাম্মাতি, মিন কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়া হাম্মাতি, ওয়ামিন কুল্লি আ’ঈনিল্লা-ম্মাতি।

اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَيْهِ وَأَذْهِبْ عَنْهُ حَرَّ الْعَيْنِ وَبَرْدَهَا وَوَصَبَهَا

আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলাইহি ওয়া আযহিব ‘আনহু হাররিল ‘আইনি ওয়া বারদাহা ওয়া ওয়াসাবাহা

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيْكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ

বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়া মিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিকা ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ, ওয়া শাররি কুল্লি যি ‘আইন

اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ

আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক্, মিন্ কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক্। মিন্ শার্রি কুল্লি নাফসিন্ আও আ’ইনি হাসিদিন, আল্লা-হু ইয়াশফীক্, বিসমিল্লা-হি আরকীক্।

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক্, ওয়ামিন কুল্লি দা-ই ইয়াশফীক। ওয়ামিন শার্রি হাসিদিন ইযা- ‘হাসাদ। ওয়া শার্রি কুল্লি যী “আঈন ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স আযহিবিল বা’স , আশফি ওয়া আনতাশ শা-ফী লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউকা শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা।

وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا ﴿۸۲
ওয়া নুনাঝঝিলুমিনাল কুরআ-নি মা হুওয়া শিফাউওঁ ওয়া রাহমাতুল লিলমু’মিনীনা ওয়ালা- ইয়াঝীদুজ্জা-লিমীনা ইল্লা-খাছা-রা-।

এরপর সুরা ফাতিহা ৩ বার
আয়াতুল কুরসি ৩ বার,
সুরা ইখলাস ৩ বার
সূরা ফালাক ৩ বার
সুরা নাস ৩ বার

ইনশা আল্লাহ, এইভাবে টানা ১ সপ্তাহ আমল করার পর মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বদনজরের অনিষ্ঠতা থেকে মুক্তি দিবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল ধরনের বদনজর জিন ও যাদুর সমস্যা থেকে হিফাযত করুক। এবং পাচ ওয়াক্ত নামাজ ও রাসুল (সাঃ) এর সকাল সন্ধ্যার জিকির সমূহ আমল করার তোফিক দিক আমীন।

1 thought on “বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ – লক্ষণ ও প্রতিকার”

Leave a Comment