বদনজর থেকে বাঁচার উপায়

১। কথার মাঝে আল্লাহর যিকির করা। (এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা একটু পর আসছে)
২। মেয়ে হলে অবশ্যই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পর্দা করা।
৩। হাদীসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দুআগুলো পড়া। বিশেষত,

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা‘আসমিহি শাইউং ফিলআরদি ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি‘উল ‘আলিম। [১০৪]

এবং
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : আ‘উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। এই দুইটি দুআ সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার করে পড়া।

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার করে পড়া। [১০৬]

৪। আর বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য কর্তব্য হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই সূরা ফালাক, নাস পড়ে বাচ্চাদের গায়ে ফুঁ দেয়া, যেমনটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও করেছেন। এ ছাড়া নিজেরা সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন দুআ পড়ার পরে বাচ্চাদেরকে ফুঁ দিয়ে দেয়াও বেশ উপকারী।

৫। বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার একটা দুআ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা পড়ে হাসান ও হুসাইনকে ফুঁ দিয়ে দিতেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দুআ মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম নিজের ছেলেদের (অর্থাৎ ইসমাইল এবং ইসহাক -দের) জন্য পড়তেন। দুআটি হচ্ছে—

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَّامَّةٍ

উচ্চারণ : আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিন-ওয়াহা -ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি আইনিন লা-ম্মাহ।

এই দুআ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদেরকে ফুঁ দিয়ে দেবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ বদনজর থেকে বাঁচতে তাবিজ-কবচ অথবা নজর টিপের দরকার হবে না। আল্লাহই হেফাজত করবেন।

দ্রষ্টব্য : অন্যের জন্য পড়লে (আউযু) এর জায়গায় (উইয়ীযুকা) বলা ভালো; দুজনের ক্ষেত্রে উইয়ীযুকুমা, আর অনেকজনের জন্য পড়লে উইয়ীযুকুম বলা ভালো। তবে সাধারণভাবে ‘আউযু বিকালিমা-তিল্লাহ…’ বললেও সমস্যা নেই; এ ক্ষেত্রে নিয়ত করে নিতে হবে, কার জন্য পড়ছেন।

৬। ফেসবুক বা এরকম সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্থক শো-অফ না করা। অহেতুক ছবি বা ঘটনা পোস্ট দিয়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ছবি মানুষকে দেখিয়ে না বেড়ানো।
৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে সেটা গোপন ও লুক্কায়িত রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারী হিংসার স্বীকার হয়ে থাকে।

মূলত এটা সফলতার একটা গোপন চাবিকাঠি। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হলো, অন্যের সামনে অহেতুক নিজের বা নিজের বাণিজ্যের সম্পদের প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্ট বা ব্যাবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, “দৈনিক এত এত বিক্রি হচ্ছে, অমুক চালানে এত টাকা লাভ হলো’। এমন আলোচনাও নজরের উৎস হতে পারে।

আমি একজন বোনের রুকইয়াহ করেছিলাম, যে তার বান্ধবীদের সামনে নিজের স্বামীর অনেক প্রশংসা করত। ইত্যবসরে তার একজন বান্ধবীর ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর এই হিংসুক বান্ধবী তাকে এবং তার স্বামীকে জাদু করে, যেন তাদের সংসার ভেঙে যায় এবং তার স্বামীকে উক্ত বান্ধবী বিয়ে করতে পারে। কী অদ্ভুত পরিকল্পনা! তা-ই না?

মোদ্দাকথা, অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকির করতে হবে। যেমন :

‘আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর ব্যাবসায় কোনো লস যায়নি।’;

“আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে।’;

মাশাআল্লাহ ভাবি, আপনি তো অনেক ভালো পিঠা বানান!’ ইত্যাদি।
আর অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে তিনি যিকির না করলে আপনার উচিত হবে যিকির করা। উদাহরণস্বরূপ, কেউ বলল, ‘আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট!’; আপনি বলুন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’

আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দুআ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। কেননা বদনজর সত্য।’

Leave a Comment