বদনজর-সংক্রান্ত কিছু ঘটনা

বদনজর বিষয়ে উদাহরণের অভাব নেই। এত ঘটনার মধ্যে সেরাটা বাছাই করাও দুষ্কর। তবুও আমরা বদনজরের ভয়াবহতা এবং এর জন্য রুকইয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সংক্ষেপে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু, নজরের রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে যোগাযোগ করুন : 01708-732272

ঘটনা ১ : প্রথম ঘটনাটি বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া, কান্নাকাটি এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে।

‘কিছুদিন আগে পরিবার নিয়ে এক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময়ই শঙ্কায় ছিলাম, বাচ্চার ওপর কারও নজর লেগে যায় কি না। এই আশঙ্কা থেকে কয়েকবার দুআ পড়ে বাচ্চাকে ফুঁ দিই। যথারীতি সেখানে গিয়ে বাচ্চার দৌড়াদৌড়ি, আর আধো-আধো কথাবার্তায় সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। আমি মনে মনে যিকির- আযকার করতে লাগলাম। তার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় ক্লান্তও হয়ে গেলাম।

সেদিন বাসায় ফিরে বাচ্চার আর খাবারের রুচি ছিল না। তবুও বাচ্চার মা জোর করে কিছু খাইয়ে দেয়। রাতে ঘুমের মধ্যে বাচ্চার অস্থিরতা দেখে আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। ফজরের নামাজের পর বাচ্চা দুষ্টুমি করতে করতে হঠাৎ বমি করে দেয়। দেখে বুঝলাম, রাতের খাবার কিছুই হজম হয়নি। সেদিন অফিসে যাওয়ার পর বাসা থেকে খবর এল, বাচ্চার পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা করছে। তখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম, কারও নজর লেগেছে। চিকিৎসা করা দরকার।

যেহেতু কার নজর লেগেছে—জানি না, তাই আমি বদনজরের রুকইয়ার দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করলাম। মাথায় হাত দিয়ে দুআ পড়লাম, তারপর গায়ে ফুঁ দিলাম। কিন্তু বিশেষ কোনো উন্নতি চোখে পড়ল না। খাওয়ায় অনীহা কমল না। তার পরের দিন সকালে হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, আমাদের কারও নজর লেগেছে কি না— সেটা দেখা যাক। বাচ্চার গোসলের আগে আমি ওজু করলাম, বাচ্চার মাও করল। তারপর সেই ওজুর পানি বাচ্চার গায়ে ঢালা হলো। এরপর এক ঘণ্টাও পার হয়নি। বাচ্চার পেটে আবার ব্যথা উঠল। টয়লেটে গেল। টয়লেটে গিয়ে কান্নাকাটি করলেও পায়খানা শেষে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বের হলো। আল্লাহ তার কুদরত দেখালেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস আবারও সত্য প্রমাণিত হলো। আলহামদুলিল্লাহ, বাচ্চা এরপর সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক।’

আমার মন্তব্য হচ্ছে, এখানে বাবা-মা বাচ্চার ব্যাপারে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন, যেটা উচিত হয়নি। বেড়াতে যাওয়ার আগে-পরে দুআ করা, বেড়াতে গিয়ে সতর্ক থাকা, সমস্যা হলে রুকইয়াহ করা—ব্যস, বাকিটুকু আল্লাহর ওপর ভরসা করে ছেড়ে দেয়া যায়।

ঘটনা ২ : এই ঘটনা মুফতি জুনায়েদ সাহেবের একজন সহকর্মীর। তিনি মুম্বাইয়ের এক মাদরাসার শিক্ষক। শুরুর দিকে তাঁর আলোচনা থেকে রুকইয়ার কিছু কিছু বিষয় জেনেছিলাম। যা হোক, ওই মাদরাসার একজন কারি সাহেবের তিন বছর যাবৎ সর্দি-কাশির সমস্যা। সমস্যা তো খুব বড় কিছু না। তবুও সেটা অনেক চিকিৎসার পরও ভালো হচ্ছিল না। মুফতি সাহেব এ ব্যাপারে জানতে পেরে বললেন, ‘ভাই! রুকইয়াহ শোনেন, রুকইয়ার গোসল করেন, পাশাপাশি ওষুধ খান৷’ কারি সাহেব বললেন, ‘বহুদিন ধরে ওষুধ খেয়ে বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিয়েছি ভাই।’ তিনি বললেন, ‘এবার রুকইয়াহ করেন, আর ওষুধ খান৷’ কারি সাহেব মাত্র একদিন রুকইয়াহ শুনলেন, রুকইয়ার গোসল করলেন, এরপর ওষুধ খেলেন। আল্লাহর রহমতে তিন বছরের কাশি একদিনে ভালো হয়ে গেল।
আরেকটা ঘটনা এরকম—একজনের ক’দিন পরপর জ্বর আসত। তার বোন এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে আমি তাকে বদনজরের রুকইয়াহ করতে বলি। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। এরপর ৭ দিনের ডিটক্স করলে আলহামদুলিল্লাহ সমস্যা দূর হয়ে যায়।

আমার নিজের স্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে, যখন অকারণে সারা দিন ক্লান্তি ঘিরে রাখে, সব কিছুতে অরুচি লাগে কিংবা মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে; অথবা যদি দেখি সাধারণ কোনো অসুখ হয়েছে, কিন্তু ওষুধ খেয়েও তেমন উন্নতি হচ্ছে না, তখন বদনজরের রুকইয়াহ করলে আল্লাহর রহমতে অনেকটাই ভালো বোধ করি।

ঘটনা ৩ : এবার সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা বলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করার পর কয়েকটি দুর্ঘটনার কথা কানে আসলেও সেগুলো বদনজরের কারণ হয়েছে—এমনটা পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছিল না। সেদিন এক ভাইয়ের ঘটনা দেখার পর নিশ্চিত হলাম। ঘটনা তার মুখেই শুনি।

‘সোশ্যাল মিডিয়াতে বাচ্চাদের ছবি-ভিডিও শেয়ার করা ঠিক না, জানতাম। মনের খচখচানি উপেক্ষা করে তবুও আজ ছেলের একটি ভিডিও ফেসবুকে দিয়েছিলাম। ফলাফল পেলাম হাতেনাতে। সন্ধ্যার পর ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ এবং চিৎকার করে কান্না শুরু করেছে। আমরা কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিকেলেও হাসিখুশি ছিল; খাওয়া, ঘুম, টয়লেট—সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পরেও এই অবস্থা কী কারণে থাকতে পারে? কোনোকিছু কামড় দেয়নি, কোনো ব্যথা পায়নি, ডায়পারও ঠিক আছে, তাহলে? একটু চিন্তা করতেই যা বোঝার বুঝে ফেললাম। সাথে সাথে ফেসবুক ভিডিওটা ডিলিট করে দিলাম। তারপর সূরা ফালাক ও নাস দিয়ে তাৎক্ষণিক রুকইয়াহ করে ফেললাম। এক মিনিটও হয়নিও, ছেলে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আলহামদুলিল্লাহ। এই ঘটনা থেকে আর কেউ শিক্ষা নিন বা না নিন, আমি যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছি।’

এরপর খোঁজ নিয়ে অন্তত সাত-আটজনকে পেয়েছি, যারা অনুরূপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। আর এই ঘটনার কিছুদিন পরেই রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপে এক বোন সাহায্য চাইলেন, তিনি আগে বিভিন্ন পদের খাবার রান্না করে সেসবের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করতেন। বর্তমানে তিনি কিছুই ঠিকমতো রান্না করতে পারেন না । এমনকি সামান্য ভাত অথবা ডিম রাঁধতে গেলেও নষ্ট করে ফেলেন। তখন তাঁকে পরামর্শ দিলাম, যেন ফেসবুক থেকে সব ছবি ডিলিট করে দেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শো-অফের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন। পাশাপাশি গুরুত্ব দিয়ে যেন বদনজরের রুকইয়াহ করেন।

অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু, নজরের রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে যোগাযোগ করুন : 01708-732272

ঘটনা ৪ : শাইখ আবদুল আযীয বিন বায একজন লোকের ঘটনা বলেছিলেন। সে থাকত বর্তমান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কাছের একটি গ্রামে। একদিন গ্রামের অন্য একজনের ভেড়ার পালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেড়াগুলোর ওপর তার বদনজর পড়ল, আর তাতেই ভেড়াগুলো সব মারা গেল। যখন ভেড়ার মালিক এসে দেখল ভেড়াগুলো সব মরা, তার পুত্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, ‘এদিক দিয়ে কে গেছে?’ ছেলেটা উত্তরে বলল যে, অমুক এবং অমুকের পুত্র ছাড়া আর কেউ এদিক দিয়ে যায়নি। ভেড়ার মালিক তার কাছে গিয়ে দেখল, লোকটা তার নিজের বাড়ির ছাদে বসে আছে। সে ডেকে বলল, “হে অমুক, তুমি কি আমার ভেড়াগুলোর পাশ দিয়ে গিয়েছো, আর নজর দিয়েছো? এখন হয় তুমি আমাকে ভেড়ার দাম দাও, অথবা তোমার বাড়ি দাও।’ বাড়ির মালিক লোকটা বলল, আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’ যেই না লোকটা নেমে আসল, অমনি বাড়িটা ধসে “আমি পড়ে গেল।

আমরা আল্লাহর পরিপূর্ণ কল্যাণময় বাক্যাবলির দ্বারা প্রতিটি শয়তান, সকল বিষাক্ত জীব এবং অনিষ্টকারীর বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

Leave a Comment