মানুষ অনেকভাবে জিন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সমাজে, পুরো শরীরে আসর না হলে, আর মুখ দিয়ে জিন কথা বলতে না লাগলে সচরাচর কেউ বিশ্বাস করে না যে, শরীরে জিন আছে। কিন্তু আসলেই এটা সম্ভব যে, কারও শরীরে জিন ঢুকে আছে আর দিনের পর দিন ক্রমাগত সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা জরুরি, আমরা যে লক্ষণগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি, এক-দুদিন এসব দেখলেই জিন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন ভাবার কারণ নেই। এগুলো অন্যান্য স্বাভাবিক অসুখ-বিসুখের কারণেও হতে পারে, জিনের নজরের কারণেও হতে পারে। তবে এই লক্ষণগুলোর মাঝে অনেকগুলো যদি কারও মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, অথবা কয়েকটি লক্ষণ প্রকটভাবে থাকে, অথবা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো থাকে, তখন ধারণা করা যায় যে, জিনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবুও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রুকইয়াহ করতে হবে।
অভিজ্ঞ রাকীর মাধ্যমে জিন, যাদু, নজরের রুকইয়াহ সার্ভিস নিতে যোগাযোগ করুন : 01708-732272
আলোচনার সুবিধার্থে জিন-আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি।
নিদ্রাবস্থায় ও জাগ্রত অবস্থায় জ্বিন আছরের লক্ষণ সমূহ।
নিদ্রাবস্থায় জিন-আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সমূহঃ
১. নিদ্রাহীনতা : সারা রাত ঘুম হয় না, হলেও খুব কম।
২. উদ্বিগ্নতা : এজন্য রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। জাগ্রত অবস্থাতেও একটুতেই চমকে ওঠা।
৩. ঘনঘন বোবায় ধরা : ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে—এমন অনুভূত হওয়া, নড়াচড়া করতে না পারা। কারও কারও এই সমস্যা স্বপ্নের মধ্যেও হতে পারে।
৪. ঘুমের মাঝে প্রায়ই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা।
৫. ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা বা দৌড় দেয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। ৬. স্বপ্নে কোনো প্রাণীকে আক্রমণ বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষত কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, গরু, মহিষ, বাঘ, সিংহ, শিয়াল, সাপ বা এই ধরনের হিংস্র প্রাণী। যদি স্বপ্নে সব সময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জিন আছে।
৭. স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো জায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা।
৮. স্বপ্নে কোনো গোরস্তান, পরিত্যক্ত জায়গা, নদী অথবা মরুভূমির সড়ক দেখা।
এটা জিনের পাশাপাশি জাদু-আক্রান্ত হওয়ারও ইঙ্গিত বহন করে। আর স্বপ্নে একই জায়গা বারবার দেখলে সেখানে জাদুর জিনিসগুলো থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
৯. বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন : অনেক লম্বা, খুবই খাটো বা খুব কালো-কুচকুচে কাউকে দেখা।
স্বপ্নে যদি মানুষটাকে সর্বদা বিশেষ কোনো চিহ্ন-সহ, যেমন : হিন্দুদের মতো ধুতি বা চন্দন পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে, জিনটা হিন্দু। যদি সব সময় পুরুষ কাউকে দেখা যায়, তবে বোঝা যাবে, আক্রমণকারী জিনটা পুরুষ।
১০. স্বপ্নে জিন-ভূত দেখা। অথবা অন্যান্য ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখা৷
১১. ঘুমের মধ্যে ‘কেউ খারাপ কিছু করতে চাচ্ছে’ বা ‘খারাপভাবে স্পর্শ করছে’
অনুভূত হওয়া।
Related Link: বদনজরের লক্ষণ সমূহ ও তার প্রতিকার
Related Link: বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ
Related Link: দীর্ঘ দিনের পেটের যাদু নষ্টের আমল
জাগ্রত অবস্থায় জ্বিন আছরের লক্ষণ সমূহঃ
১. ইবাদতবিমুখতা : নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার থেকে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া।
২. দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা : চোখ, কান, দাঁত ইত্যাদির সমস্যার কারণে নয়; এমনিই মাথার একপাশে অথবা উভয়দিকে ব্যথা করা, আর এজন্য ওষুধ খেয়েও তেমন ফায়দা না পাওয়া।
৩. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা।
৪. খুব সামান্য কোনো কারণেই যখন-তখন রেগে যাওয়া কিংবা কান্নাকাটি করা।
৫. বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া।
৬. হঠাৎ অজ্ঞান বা বেহুঁশ হয়ে যাওয়া, দাঁতে-দাঁত লেগে ফিট হয়ে যাওয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৭. মৃগীরোগ বা Epilepsy। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৮. অস্বাভাবিক আচরণ করা। এরকম অনুভূত হওয়া যে, ‘আমি খারাপ আচরণ করতে চাচ্ছি না, তবুও কথা বলতে গেলেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি।”
৯. শরীরের কোনো অঙ্গে প্রায় সময় ব্যথা থাকা কিংবা একদম বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুঁজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে |
১০. ব্যাপক অলসতা; সব সময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা, শরীর ভারী হয়ে থাকা। ১১. কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াত বা আযান সহ্য না হওয়া। এটিও গুরুত্বপূর্ণ
লক্ষণ।
১২. নিজের সন্তানকে বুকের দুধ খেতে না দেয়া। অথবা সন্তান দুধ খেতে না চাওয়া। বাচ্চার মা জিন-আক্রান্ত হলে এই দুটোর যেকোনো একটা হতে
পারে।
১৩. হ্যালুসিনেশন বৃদ্ধি পাওয়া। ফলে রোগী জাগ্রত অবস্থাতেই স্বপ্নের মতো বিভিন্ন কিছু দেখতে পায়, যা অন্যরা দেখছে না ।
১৪. জিন দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগীর মাঝে জিনের স্বভাব প্রকাশ পায়।
উদাহরণস্বরূপ কেউ মুশরিক জিন দ্বারা আক্রান্ত হলে হিন্দুদের মতো সাজগোজ, মন্দিরের আওয়াজ ইত্যাদির প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতে পারে।
১৫. এ ছাড়া জিনের রোগীর সাথে বিভিন্ন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে দেখা যায়৷ যেমন : রাতে কারও ব্যাপারে দুর্ঘটনার স্বপ্ন দেখা এবং পরের দিন সেটা সত্যি হয়ে যাওয়া, কারও ওপর রেগে গেলে বা অভিশাপ দিলে তার ক্ষতি হওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বিশেষভাবে বেঁচে যাওয়া ইত্যাদি।
আবারও মনে করিয়ে দিই, এর মাঝে কিছু লক্ষণ শারীরিক বা মানসিক রোগের কারণেও প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ যখন এসবের কোনো সুরাহা না হয়, তখন বুঝে নিতে হবে, আসলেই কোনো প্যারানরমাল সমস্যা আছে। এ ছাড়া রুকইয়াহ করলেই মূল বিষয়টা নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে ইনশাআল্লাহ।
2 thoughts on “জ্বিন আছরের লক্ষণ সমূহ – এখনই মিলিয়ে নিন নিজের সাথে।”